প্রতিটি মানুষেরই স্বপ্ন থাকে একটি সুন্দর বাড়ি, গাড়ি এবং নারীর। বাড়িতে নারী আনার আগে এবং গাড়ি আনার আগে বাড়ি থাকাটা খুবই জরুরি। মানুষের মৌলিক চাহিদার মধ্যে অন্যতম একটি হচ্ছে বাড়ি। একজন মানুষ তার সারা জীবনের সঞ্চয় দিয়ে একটি বাড়ি তৈরি করেন, আর যদি সেই বাড়িটি তার মনমত না হয়, তাহলে দুঃখের শেষ থাকে না।
সুতরাং, বাড়ি তৈরির আগে অবশ্যই বাড়ির ডিজাইন করে নেবেন, যাতে ভবিষ্যতে পস্তাতে না হয়। বাড়ি তৈরির আগে যে বিষয়গুলো খেয়াল রাখতে হবে, তা মনে রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বাড়ি তৈরির আগে যে বিষয়গুলো খেয়াল রাখতে হবে
বাড়ি নির্মাণের জন্য প্রতিটি বিষয়ই খুব গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা দরকার বলে আমি মনে করি। বাড়ি নির্মাণের আগে সবচেয়ে বেশি করে ভাবতে হয় এর অবকাঠামোগত দিক নিয়ে। তারপর ও কিছু বিশেষ বিশেষ দিক খুবিই সংক্ষেপে তুলে ধরতে চেষ্টা করব।
১) স্থান নির্বাচন
বাড়ি তৈরি করার আগে আপনার জমিটি ভালো করে মেপে নিন, যাতে জমি নিয়ে কোনো সমস্যায় পড়তে না হয়। বাড়ি নির্মাণের জন্য এমন জমি নির্বাচন করুন যাতে বৃষ্টির পানি এবং বন্যার পানি বাড়িতে প্রবেশ করতে না পারে। প্রয়োজনে মাটি কেটে বাড়ি উঁচু করে নিতে পারেন।
যদি বাড়ির জমিটিতে অতীতে পুকুর বা কোনো গর্ত থেকে থাকে, তাহলে সেটি ভালো করে মাটি ভরাট করে কিছুদিন রেখে দিন, তারপর বাড়ি নির্মাণ করুন। অনেক সময় মাটি ভরাটের সাথে সাথে বাড়ি করলে মাটি ডেবে যেতে পারে, যা ভবনের ক্ষতি করতে পারে। সুতরাং, এই বিষয়টি গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করবেন।
২) বাজেট নির্ধারণ
অনেক সময় আমরা বাড়ির বাজেট নির্ধারণ না করে বাড়ি তৈরির কাজে লেগে যাই। এর ফলে দেখা যায় বাড়ি সম্পূর্ণ করার আগেই বাজেটে ঘাটতি পড়ে এবং বাড়িটি অসমাপ্ত থাকে। সুতরাং, বাড়ি তৈরির আগে একজন ইঞ্জিনিয়ার দ্বারা সঠিকভাবে বাজেট তৈরি করে নেওয়া উচিত। এটি আপনাকে খরচের পরিকল্পনা করতে সাহায্য করবে এবং ভবিষ্যতে আর্থিক চাপ থেকে রক্ষা করবে।
৩) সয়েল টেস্ট
বাড়ি তৈরি করার আগে সয়েল টেস্ট করে নিতে হবে। সয়েল টেস্টের মাধ্যমে নিশ্চিত হতে হবে যে শুধুমাত্র ফুটিং করলেই হবে, নাকি পাইলিং করতে হবে। সাধারণত, এক বা দুই তলার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে সয়েল টেস্ট না করলেও চলে। কিন্তু হাই রাইজ বিল্ডিং-এর ক্ষেত্রে অবশ্যই সয়েল টেস্ট করে নিতে হবে।
তবে মাটি পরীক্ষার পূর্বে অবশ্যই আপনার সিভিল ইঞ্জিনিয়ার অথবা স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ারের সাথে আলোচনা করে নিন। কারণ, ভবনের উচ্চতার সাথে কত গভীরতায় বোরিং করতে হবে, তা তারা আপনাকে সঠিকভাবে নির্দেশনা দেবেন।
৪) বাড়ির ডিজাইন
বাড়ির ডিজাইন ও স্থাপত্যের ক্ষেত্রে আপনার চাহিদা এবং স্বপ্নের বাড়িটি কেমন হবে, তা পরিষ্কারভাবে বুঝে নিতে হবে। বাড়িটিতে কয়টি রুম থাকবে, বাড়িতে কী কী সুবিধা থাকবে এবং বাড়িটি দেখতে কেমন হবে সবকিছুই ডিজাইনে উল্লেখ করতে হবে।
বাড়ি তৈরির আগে 3D মডেলিংয়ের মাধ্যমে দেখে নিতে পারেন, বাড়িটি তৈরি করার পর দেখতে কেমন হবে। এটি আপনাকে বাস্তবে কেমন হবে তার একটি স্পষ্ট ধারণা দেবে এবং প্রয়োজন হলে ডিজাইনে পরিবর্তন আনতে সাহায্য করবে।
৫) নির্মাণ সামগ্রী
বাড়ি তৈরির ক্ষেত্রে সবসময়ই ভালো মানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করার চেষ্টা করবেন। এতে বাড়ির স্থায়িত্ব এবং সৌন্দর্য বৃদ্ধি পাবে। অনেকেই বাড়ি তৈরির আগে নির্মাণ সামগ্রী একসাথে কিনে ফেলেন। এই কাজটি কখনো করবেন না। কারণ, রড যদি বেশিদিন বাইরে পড়ে থাকে তাহলে রডে মরিচা পড়তে শুরু করে, এবং সিমেন্ট যদি অনেক দিন থাকে তাহলে সিমেন্টের টেম্পার দিন দিন কমে যেতে থাকে। একই সাথে যদি অনেকগুলো ইট একসাথে কিনে রেখে দেন, তাহলে দেখা যায় ইটের ধীরে ধীরে শ্যাওলা পড়তে থাকে। আর যদি বালি কিনেন, তাহলে দেখা যায় বালিতে ময়লা পড়তে থাকে এবং বালি নষ্ট হতে থাকে। সুতরাং, যখন যতটুকু প্রয়োজন, ততটুকু নির্মাণ সামগ্রী কিনাই সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ।
৬) ইট
ইট কেনার ক্ষেত্রে একটি জিনিস খেয়াল করবেন, তা হলো ইটের সাইজ ঠিক আছে কিনা। একটি ইটের ট্যান্ডার্ড সাইজ হচ্ছে ৯.৫” x ৪.৫” x ২.৭৫”। ইটের বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা আছে, যার মাধ্যমে চেক করা যায় ইট ভালো কিনা। তবে ইটের ভাটাই তাৎক্ষণিক পরীক্ষার জন্য সাধারণ কিছু টিপস আছে, সেগুলো অবলম্বন করতে পারেন। তার মধ্যে একটি হচ্ছে টি টেস্ট পরীক্ষা। ইংরেজি অক্ষর “টি” এর মতো করে দুটি ইট চার থেকে পাঁচ ফুট উপর থেকে মাটিতে ছেড়ে দিন। যদি ইটগুলো ভেঙ্গে যায়, তাহলে বুঝতে হবে ইটটি ভালো নয়; আর যদি না ভেঙ্গে, তাহলে বুঝতে হবে ইটটি ভালো। দুটি ইটকে পরস্পর একটি সাথে আরেকটিকে আঘাত করলে, যদি টনটন শব্দ করে, তাহলে বুঝতে হবে ইটটি ভালো। ইট গাথনির পূর্বে কমপক্ষে ১২ থেকে ২৪ ঘণ্টা হাউসে ভিজিয়ে রাখুন। এতে করে দেয়ালে লোনা পড়ার সম্ভাবনা কমে যায়।
৭) বালি
বালি কেনার ক্ষেত্রে সব সময় পরিষ্কার এবং স্বচ্ছ বালি কেনার চেষ্টা করবেন। গাথনির ক্ষেত্রে এবং ঢালাইয়ের জন্য সব সময় মোটা বালি ব্যবহার করবেন, আর প্লাস্টারের ক্ষেত্রে চিকন বালি ব্যবহার করতে পারেন। প্লাস্টার করার পূর্বে অবশ্যই বালি চেলে এবং যদি সম্ভব হয়, তাহলে বালি পানি দিয়ে ধুয়ে ব্যবহার করলে সবচেয়ে ভালো। এতে করে দেয়ালে নোনা পড়ার সম্ভাবনা কম থাকে।
৮) দক্ষ মিস্ত্রি
বাড়ি তৈরি করার ক্ষেত্রে একজন দক্ষ মিস্ত্রি নির্বাচন করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, যদি মিস্ত্রি ভালো না হন, তবে আপনি নির্মাণ সামগ্রী যত ভালোই কিনেন না কেন, আপনার বিল্ডিংয়ের গুণগত মানের কোনো উপকার হবে না।
সর্বোত্তম হলো, একজন ইঞ্জিনিয়ারের মাধ্যমে মাঝে মাঝে সাইট পরিদর্শন করানো। এতে করে মিস্ত্রি যদি কোনো জায়গায় ভুল করেন, তাহলে ইঞ্জিনিয়ার তা দ্রুত ধরতে পারেন। বিশেষ করে হাইরাইজ বিল্ডিং-এর ক্ষেত্রে সাইটে সবসময় একজন সাইট ইঞ্জিনিয়ার রাখা অত্যন্ত জরুরি।
৯) কিউরিং
যদি আপনি পাকা বাড়ি তৈরি করেন, তাহলে বাড়ির জন্য কিউরিংটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এক কথায় কিউরিংকে বিল্ডিংয়ের প্রাণ বলা যেতে পারে। দিনে অন্ততপক্ষে দুইবার কিউরিং করতে হবে। ছাদ ঢালাইয়ের পর ছাদের চারপাশে বাদ দিয়ে ১৫-২০ দিন ছাদে পানি ধরে রাখতে হবে। কলাম ঢালাইয়ের ক্ষেত্রে কলামকে চট দিয়ে ভালো করে মুড়িয়ে চটি সবসময় ভিজিয়ে রাখার চেষ্টা করবেন। এতে করে কংক্রিট তার সম্পূর্ণ শক্তি পাবে এবং বিল্ডিংয়ের আয়ু বৃদ্ধি পাবে।
উপসংহার
বাড়ি তৈরির আগে যে বিষয়গুলো খেয়াল রাখতে হবে তা আমরা উপরে আলোচনা করেছি । সর্বোপরি একটি কথা বলতে চাই, একটি সুন্দর বাড়ি তৈরি করার ক্ষেত্রে যেমন একটি আকর্ষণীয় ডিজাইন প্রয়োজন, তেমনি দক্ষ মিস্ত্রি এবং মানসম্পন্ন মালামালও প্রয়োজন। এই সকল কিছুর সমন্বয়ে একটি সুন্দর পরিকল্পিত বাড়ি গড়ে উঠতে পারে।
যদি কেউ বাড়ির ডিজাইন করতে চান, সেক্ষেত্রে আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। সুদীর্ঘ ৮ বছরের অভিজ্ঞতা থেকে আমরা কম খরচে আপনার ইচ্ছা পূরণ করতে বদ্ধপরিকর। এখনই যোগাযোগ করুন ০১৬৬০-২০০৮২২ এই নম্বরে অথবা আমাদের হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ করতে পারেন। আমরা সমগ্র বাংলাদেশে ডিজাইন করে থাকি।
আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে চাইলে:
Phone: 01660-200822, 01721-906431
Whatsapp: +8801660200822
Address: Mirpur-1, Dhaka, Bangladesh
Facebook Page: Dream Home
Facebook Group: Dream Home
Youtube : Dream Home
Email : bddreamhome@gmail.com
গ্রামের একতলা বাড়ির ডিজাইন দেখতে চান সে ক্ষেত্রে এই লিঙ্কে দেখতে পারেন